ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রূপগঞ্জে ৭১ টেলিভিশনের সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ গংগাচড়ায় গৃহবধূ সালেহা হত্যা মামলায় ১ জনের যাবজ্জীবন, একজনের ১ বছর ও ৩ জনের ৬ মাসের কারাদণ্ড সাবেক এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ গ্রেফতার বগুড়া শেরপুরে অধ্যক্ষ নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন: কিশোরের দায় স্বীকার কাউনিয়ায় বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয় নিহতদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ১ জন, শিশু ১ জন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে এনসিপির বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্বপ্ন হলো বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ – শিবির সেক্রেটারী সাদ্দাম সাবেক মেয়র আইভী গ্রেপ্তার , নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে প্রশাসনের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আব্দুল রাজ্জাকের ভূমিকা অপরিসীম

মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্প বাতিল।

ফখরুল আলম সাজু ক্রাইম রিপোর্টার ঢাকা :
  • আপডেট সময় : ০২:০৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক যখন সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফখরুল আলম সাজু ক্রাইম রিপোর্টার ঢাকা :

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশে সমাধি নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, সমাধি নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও কোথাও সমাধি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, এসব কারণে ২০ হাজারের মধ্যে ১৫ হাজার ৬০৪টি সমাধি আর নির্মাণ করা হবে না, তবে যোদ্ধসমাধি ধরনের কিছু করার কথা ভাবা হচ্ছে।

সারা দেশে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মোট ২০ হাজার সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শিরোনামের প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয় ৪৬১ কোটি টাকা, পরে ব্যয় কমিয়ে করা হয় ৩৯৬ কোটি টাকা, প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার সমাধি করার সিদ্ধান্ত হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা ধরে, আর ১৫ হাজার সমাধি করার কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের “ইউএনও” দেওয়া তালিকা অনুযায়ী।

আমরা দুটি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি তাতে দেখা গেছে, সমাধি দুটি ছোট ছোট সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না, এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির যোদ্ধসমাধি মতো করা হবে, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নজরদারি করা সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের “আইএমইডি” প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের তালিকা দেওয়া ৫ হাজার সমাধির মধ্যে ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে, ২৭০টির কাজ চলমান ইউএনওদের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মিত হয়নি, আইএমইডির তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৮০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।

মূলত জমির জটিলতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি করা যাচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক পলি কর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে ভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চার সমস্যা চিহ্নিত।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন, মূলত সেসব স্থানে সমাধি নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল।

সমাধি নির্মাণ করতে গিয়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা বলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়
১. সমাধির জায়গা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
২. অন্যত্র সমাধি করতে গেলে জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
৩. সমাধির নকশায় ত্রুটি এবং
৪. সমাধির জন্য প্রতিবছর যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া দরকার তা দেওয়া হয়নি, এসব কারণে অনুমোদনের পর ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে এক-চতুর্থাংশের কম।

সমাধি নির্মাণের জন্য উপজেলাগুলোতে ইউএনওকে সভাপতি করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল, কমিটির বাকি ২ জন সদস্য ইউএনও মনোনীত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও।

তবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জানানো হয়, বেশির ভাগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, সেখানে সমাধি করা কঠিন, নির্ধারিত জায়গার বাইরে সমাধি করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, অনেকেই জমি দিতে আগ্রহী নন, আবার কোথাও কোথাও সরকার অনুমোদিত জায়গার মধ্যে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি নেই।

এ বিষয়ে গত ২৯ মার্চ রংপুর, জামালপুর ও নোয়াখালীর ৩ উপজেলার ইউএনওদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁরা নতুন কর্মস্থলে এসেছেন, তাঁরা বলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সমাধির কোনো তথ্য জানা নেই, সমাধির তালিকা সম্পর্কেও কিছু জানেন না তাঁরা।

নকশা নিয়েও জটিলতা।

সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা জানান, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মূল নকশায় সমাধির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি নির্ধারণ করা হয়, আর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৩ ফুট নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নকশা ধরে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্পটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি, দায়সারাভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল, প্রকল্প পরিচালক পিডি বদল হয়েছে অন্তত ৫ বার চাহিদা অনুযায়ী বাজেটও দেওয়া হতো না, সব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি সমাপ্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের কাজ শূন্য।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা আইএমইডির পরিচালক “উপসচিব” নিশাত জাহান গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ৩টি সমাধি পরিদর্শনে যান, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুস্তম আলী চৌধুরীর সমাধি পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মাণ করা হয়নি, বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২৭০টি সমাধির নির্মাণকাজ চলছে, ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে, গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে বাকি কাজ শেষ করতে আরও ১ বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

যোদ্ধসমাধি করা হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, ২৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির “এডিপি” প্রকল্প পর্যালোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম প্রকল্পটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

পরে অক্টোবর মাসে এডিপি সভায় প্রকল্পের আওতায় নতুন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার নির্দেশ দেন উপদেষ্টা, শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মাণাধীন সমাধিগুলোর বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদেরকে বলেন, সমাধি নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না।

এ কারণে সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা, তিনি বলেন আমি ২টি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি, তাতে দেখা গেছে সমাধি ২টি ছোট ছোট, সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না, এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির যোদ্ধসমাধি মতো করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্প বাতিল।

আপডেট সময় : ০২:০৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ফখরুল আলম সাজু ক্রাইম রিপোর্টার ঢাকা :

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশে সমাধি নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, সমাধি নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও কোথাও সমাধি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, এসব কারণে ২০ হাজারের মধ্যে ১৫ হাজার ৬০৪টি সমাধি আর নির্মাণ করা হবে না, তবে যোদ্ধসমাধি ধরনের কিছু করার কথা ভাবা হচ্ছে।

সারা দেশে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মোট ২০ হাজার সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শিরোনামের প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয় ৪৬১ কোটি টাকা, পরে ব্যয় কমিয়ে করা হয় ৩৯৬ কোটি টাকা, প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার সমাধি করার সিদ্ধান্ত হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা ধরে, আর ১৫ হাজার সমাধি করার কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের “ইউএনও” দেওয়া তালিকা অনুযায়ী।

আমরা দুটি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি তাতে দেখা গেছে, সমাধি দুটি ছোট ছোট সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না, এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির যোদ্ধসমাধি মতো করা হবে, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নজরদারি করা সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের “আইএমইডি” প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের তালিকা দেওয়া ৫ হাজার সমাধির মধ্যে ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে, ২৭০টির কাজ চলমান ইউএনওদের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মিত হয়নি, আইএমইডির তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৮০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।

মূলত জমির জটিলতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি করা যাচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক পলি কর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে ভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চার সমস্যা চিহ্নিত।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন, মূলত সেসব স্থানে সমাধি নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল।

সমাধি নির্মাণ করতে গিয়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা বলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়
১. সমাধির জায়গা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
২. অন্যত্র সমাধি করতে গেলে জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
৩. সমাধির নকশায় ত্রুটি এবং
৪. সমাধির জন্য প্রতিবছর যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া দরকার তা দেওয়া হয়নি, এসব কারণে অনুমোদনের পর ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে এক-চতুর্থাংশের কম।

সমাধি নির্মাণের জন্য উপজেলাগুলোতে ইউএনওকে সভাপতি করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল, কমিটির বাকি ২ জন সদস্য ইউএনও মনোনীত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও।

তবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জানানো হয়, বেশির ভাগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, সেখানে সমাধি করা কঠিন, নির্ধারিত জায়গার বাইরে সমাধি করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, অনেকেই জমি দিতে আগ্রহী নন, আবার কোথাও কোথাও সরকার অনুমোদিত জায়গার মধ্যে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি নেই।

এ বিষয়ে গত ২৯ মার্চ রংপুর, জামালপুর ও নোয়াখালীর ৩ উপজেলার ইউএনওদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁরা নতুন কর্মস্থলে এসেছেন, তাঁরা বলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সমাধির কোনো তথ্য জানা নেই, সমাধির তালিকা সম্পর্কেও কিছু জানেন না তাঁরা।

নকশা নিয়েও জটিলতা।

সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা জানান, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মূল নকশায় সমাধির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি নির্ধারণ করা হয়, আর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৩ ফুট নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নকশা ধরে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্পটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি, দায়সারাভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল, প্রকল্প পরিচালক পিডি বদল হয়েছে অন্তত ৫ বার চাহিদা অনুযায়ী বাজেটও দেওয়া হতো না, সব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি সমাপ্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের কাজ শূন্য।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা আইএমইডির পরিচালক “উপসচিব” নিশাত জাহান গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ৩টি সমাধি পরিদর্শনে যান, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুস্তম আলী চৌধুরীর সমাধি পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মাণ করা হয়নি, বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২৭০টি সমাধির নির্মাণকাজ চলছে, ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে, গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে বাকি কাজ শেষ করতে আরও ১ বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

যোদ্ধসমাধি করা হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, ২৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির “এডিপি” প্রকল্প পর্যালোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম প্রকল্পটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

পরে অক্টোবর মাসে এডিপি সভায় প্রকল্পের আওতায় নতুন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার নির্দেশ দেন উপদেষ্টা, শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মাণাধীন সমাধিগুলোর বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদেরকে বলেন, সমাধি নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না।

এ কারণে সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা, তিনি বলেন আমি ২টি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি, তাতে দেখা গেছে সমাধি ২টি ছোট ছোট, সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না, এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির যোদ্ধসমাধি মতো করা হবে।