ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে আনছেন ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন। শাহজাহানপুরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজল আটক খোকসা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড এলাকা উপজেলা পেছনে দীর্ঘ বছর ধরে অবহেলিত অবস্থায়। সহকারী শিক্ষক দ্বারা নারী প্রধান শিক্ষক লাঞ্চিত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা প্রকল্প সংলগ্ন অঞ্চলে কমপক্ষে ১২ একর জায়গা খোঁজা হচ্ছে: তিস্তাপাড়ে চীনের হাসপাতাল স্থাপনের দাবি নদীভাঙনকবলিত মানুষের চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধ*র্ষণের অভিযোগে বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুড়িগ্রামে ৪৭ কেজিসহ দুইজন আটক ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রংপুরে আধাবেলা ধর্মঘট পালিত : ফিলিস্তিনে শহীদদের জন্য দোয়াসহ ইসরাইলি সব পণ্য বয়কটের ডাক টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে পরিত্যক্ত হাতবোমা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ২৫ জন আহত শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা সনদ ও চেক হস্তান্তর

রংপুরে সিগারেটের প্যাকেটে নকল ব্যান্ডরোল, জমা দিলেই মেলে টাকা!

হীমেল কুমার মিত্র স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:৫২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩ ২০৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক যখন সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিড়িশিল্প সমৃদ্ধ রংপুরের হারাগাছ এলাকায় বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হচ্ছে নকল ব্যান্ডরোল। আর এসব নকল ব্যান্ডরোল জমিয়ে দোকানিকে দিলে পাওয়া যায় টাকা। প্রায় ১০০ ব্যান্ডরোল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনে নিয়ে যান খোদ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। পরে এসব নতুন প্যাকেটের রাজস্ব পরিশোধের স্টিকার হিসেবে বাজারে ছাড়া হয় নতুন প্যাকেট।

রংপুরে দোকানে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটারের পাশে দোকানির জমানো নকল ব্যান্ডরোল।

সরেজমিনে বিড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত রংপুরের হারাগাছে দালালের হাটের মাহমুদুল কবিরের দোকানে পাওয়া গেল সিগারেটের প্যাকেট থেকে খুলে রাখা বেশকিছু ব্যান্ডরোল।

তিনি জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা শ’ হিসেবে খোদ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাই এসব তাদের কাছ থেকে নিয়ে যান। পরে নতুন করে ছাড়া সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হয় এসব।

পাশের দোকানি আবদুল ওয়াহেদের দোকানে পাওয়া গেলো নকল ব্যান্ডরোল লাগানো প্যাকেট দেখা যায়।

দোকানি মাহমুদুল কবির জানান, সিগারেট কোম্পানির বিভিন্ন এজেন্ট আমাদের সিগারেট গায়ে লাগানো ব্যান্ডরোল খুলে সংগ্রহ করে রাখতে বলেন। ১০০টি ব্যান্ডরোল দিলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য আমরা এগুলো সংগ্রহ করে রেখে দেই।

সরেজমিনে বিড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত রংপুরের হারাগাছে দালালের হাটের মাহমুদুল কবিরের দোকানে পাওয়া গেল সিগারেটের প্যাকেট থেকে খুলে রাখা বেশকিছু ব্যান্ডরোল।

তিনি জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা শ’ হিসেবে খোদ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাই এসব তাদের কাছ থেকে নিয়ে যান। পরে নতুন করে ছাড়া সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হয় এসব।

দোকানি মাহমুদুল কবির বলেন, সিগারেট কোম্পানির বিভিন্ন এজেন্ট আমাদের সিগারেট গায়ে লাগানো ব্যান্ডরোল খুলে সংগ্রহ করে রাখতে বলেন। ১০০টি ব্যান্ডরোল দিলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য আমরা এগুলো সংগ্রহ করে রেখে দেই।

দোকানদার জিহারুল আলম জানান , বিড়ি কোম্পানির লোকজন বিড়ি দিয়ে যায় আমরা বিক্রি করি। তবে এসব বিড়ির প্যাকেটে লাগানো ব্যান্ডরোল আসল নাকি নকল সেটা আমরা যাচাই করি না। যেভাবে দিয়ে যায় আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। এসব দেখার দায়িত্ব কাস্টমসের। সেটা তারাই দেখভাল করবেন।

বিড়ির প্যাকেটের গায়ে যেসব ব্যান্ডরোল লাগানো থাকে সেটি আসল এবং নকল কিনা সেটি সহজেই চেনার উপায় জানালেন রানা নামের এক বিড়ি শ্রমিক। তিনি বলেন, যদি ব্যান্ডরোলটি আসল হয় তাহলে ব্যান্ডরোলের ওপরে পানি দিলে সেটি পুরোটাই সাদা হয়ে যাবে আর যদি নকল হয় পানি দিলেও রং উঠবে না ব্যান্ডরোল থেকে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ বছরে রংপুর জেলায় বিড়িতে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার, ব্যান্ডরোলবিহীন বাজারজাত করার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ বিড়ি জব্দসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৬৪ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও এখনো ৭৯টি মামলা বিচারাধীন। এসব নিষ্পত্তি মামলাসমূহের বিপরীতে মোট ১০৩ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে কাস্টমসেরই কেউ কেউ জড়িত বলে অভিযোগ অনেকের।

হারাগাছের দালালের হাটের স্থানীয় যুবক প্রিন্স জানান , হারাগাছ বিড়ি-অধ্যুষিত এলাকা। এখানে অধিকাংশ বিড়ি ফ্যাক্টরিতেই নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে বাজারজাত করা হচ্ছে; কিন্তু কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তাই দেখভাল করছেন না। কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অধিকাংশ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক এসব করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাজারে এসব ব্যবহৃত ও নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার সম্পর্কে কাস্টমসের বক্তব্য নিয়ে কাস্টমস এক্সাইট ও ভ্যাট বিভাগের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে গেলে কোনো কর্মকর্তায় বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এ ছাড়া নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর সরকার কি পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সে বিষয়েও দেননি কোনো তথ্য।

এক সময় ১০০ কারখানায় বিড়ি উৎপাদন হলেও এখন অনলাইনে লাইসেন্স পাওয়া সহজতর হওয়ায় হারাগাছ শহরে ঘরে ঘরে হয়েছে বিড়ির কারখানা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, রাজস্ব ফাঁকি রোধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেয়া আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রংপুরে সিগারেটের প্যাকেটে নকল ব্যান্ডরোল, জমা দিলেই মেলে টাকা!

আপডেট সময় : ১২:৫২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

বিড়িশিল্প সমৃদ্ধ রংপুরের হারাগাছ এলাকায় বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হচ্ছে নকল ব্যান্ডরোল। আর এসব নকল ব্যান্ডরোল জমিয়ে দোকানিকে দিলে পাওয়া যায় টাকা। প্রায় ১০০ ব্যান্ডরোল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনে নিয়ে যান খোদ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। পরে এসব নতুন প্যাকেটের রাজস্ব পরিশোধের স্টিকার হিসেবে বাজারে ছাড়া হয় নতুন প্যাকেট।

রংপুরে দোকানে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটারের পাশে দোকানির জমানো নকল ব্যান্ডরোল।

সরেজমিনে বিড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত রংপুরের হারাগাছে দালালের হাটের মাহমুদুল কবিরের দোকানে পাওয়া গেল সিগারেটের প্যাকেট থেকে খুলে রাখা বেশকিছু ব্যান্ডরোল।

তিনি জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা শ’ হিসেবে খোদ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাই এসব তাদের কাছ থেকে নিয়ে যান। পরে নতুন করে ছাড়া সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হয় এসব।

পাশের দোকানি আবদুল ওয়াহেদের দোকানে পাওয়া গেলো নকল ব্যান্ডরোল লাগানো প্যাকেট দেখা যায়।

দোকানি মাহমুদুল কবির জানান, সিগারেট কোম্পানির বিভিন্ন এজেন্ট আমাদের সিগারেট গায়ে লাগানো ব্যান্ডরোল খুলে সংগ্রহ করে রাখতে বলেন। ১০০টি ব্যান্ডরোল দিলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য আমরা এগুলো সংগ্রহ করে রেখে দেই।

সরেজমিনে বিড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত রংপুরের হারাগাছে দালালের হাটের মাহমুদুল কবিরের দোকানে পাওয়া গেল সিগারেটের প্যাকেট থেকে খুলে রাখা বেশকিছু ব্যান্ডরোল।

তিনি জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা শ’ হিসেবে খোদ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাই এসব তাদের কাছ থেকে নিয়ে যান। পরে নতুন করে ছাড়া সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার হয় এসব।

দোকানি মাহমুদুল কবির বলেন, সিগারেট কোম্পানির বিভিন্ন এজেন্ট আমাদের সিগারেট গায়ে লাগানো ব্যান্ডরোল খুলে সংগ্রহ করে রাখতে বলেন। ১০০টি ব্যান্ডরোল দিলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য আমরা এগুলো সংগ্রহ করে রেখে দেই।

দোকানদার জিহারুল আলম জানান , বিড়ি কোম্পানির লোকজন বিড়ি দিয়ে যায় আমরা বিক্রি করি। তবে এসব বিড়ির প্যাকেটে লাগানো ব্যান্ডরোল আসল নাকি নকল সেটা আমরা যাচাই করি না। যেভাবে দিয়ে যায় আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। এসব দেখার দায়িত্ব কাস্টমসের। সেটা তারাই দেখভাল করবেন।

বিড়ির প্যাকেটের গায়ে যেসব ব্যান্ডরোল লাগানো থাকে সেটি আসল এবং নকল কিনা সেটি সহজেই চেনার উপায় জানালেন রানা নামের এক বিড়ি শ্রমিক। তিনি বলেন, যদি ব্যান্ডরোলটি আসল হয় তাহলে ব্যান্ডরোলের ওপরে পানি দিলে সেটি পুরোটাই সাদা হয়ে যাবে আর যদি নকল হয় পানি দিলেও রং উঠবে না ব্যান্ডরোল থেকে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ বছরে রংপুর জেলায় বিড়িতে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার, ব্যান্ডরোলবিহীন বাজারজাত করার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ বিড়ি জব্দসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৬৪ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও এখনো ৭৯টি মামলা বিচারাধীন। এসব নিষ্পত্তি মামলাসমূহের বিপরীতে মোট ১০৩ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে কাস্টমসেরই কেউ কেউ জড়িত বলে অভিযোগ অনেকের।

হারাগাছের দালালের হাটের স্থানীয় যুবক প্রিন্স জানান , হারাগাছ বিড়ি-অধ্যুষিত এলাকা। এখানে অধিকাংশ বিড়ি ফ্যাক্টরিতেই নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে বাজারজাত করা হচ্ছে; কিন্তু কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তাই দেখভাল করছেন না। কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অধিকাংশ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক এসব করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাজারে এসব ব্যবহৃত ও নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার সম্পর্কে কাস্টমসের বক্তব্য নিয়ে কাস্টমস এক্সাইট ও ভ্যাট বিভাগের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে গেলে কোনো কর্মকর্তায় বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এ ছাড়া নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর সরকার কি পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সে বিষয়েও দেননি কোনো তথ্য।

এক সময় ১০০ কারখানায় বিড়ি উৎপাদন হলেও এখন অনলাইনে লাইসেন্স পাওয়া সহজতর হওয়ায় হারাগাছ শহরে ঘরে ঘরে হয়েছে বিড়ির কারখানা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, রাজস্ব ফাঁকি রোধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেয়া আছে।