ঢাকা ১২:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে আনছেন ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন। শাহজাহানপুরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজল আটক খোকসা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড এলাকা উপজেলা পেছনে দীর্ঘ বছর ধরে অবহেলিত অবস্থায়। সহকারী শিক্ষক দ্বারা নারী প্রধান শিক্ষক লাঞ্চিত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা প্রকল্প সংলগ্ন অঞ্চলে কমপক্ষে ১২ একর জায়গা খোঁজা হচ্ছে: তিস্তাপাড়ে চীনের হাসপাতাল স্থাপনের দাবি নদীভাঙনকবলিত মানুষের চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধ*র্ষণের অভিযোগে বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুড়িগ্রামে ৪৭ কেজিসহ দুইজন আটক ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রংপুরে আধাবেলা ধর্মঘট পালিত : ফিলিস্তিনে শহীদদের জন্য দোয়াসহ ইসরাইলি সব পণ্য বয়কটের ডাক টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে পরিত্যক্ত হাতবোমা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ২৫ জন আহত শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা সনদ ও চেক হস্তান্তর

নির্বাচিত সরকারই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি

মোঃমকবুলার রহমান নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক যখন সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃমকবুলার রহমান নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি নির্ভর করে সুসংগঠিত বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ খরায় ভুগছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ পরিবেশ, স্থিতিশীল সরকার এবং মুনাফার নিশ্চয়তা চান। অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকার সে নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। ফলে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগ সংকট:

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী। যদিও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক, তবু সরকারের ঋণ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং আর্থিক খাতে তেমন কোনো সুখবর নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে তার উপস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রমাণ করে যে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং বাস্তব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এক বিষয় নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগকারীরা আসবেন না, এটি ড. ইউনূসও অনুধাবন করেছেন। তাই তিনি নির্বাচনমুখী সংস্কারের পথে হাঁটছেন।

নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ’৭২-এর সংবিধান কার্যত বাতিল হয়ে গেছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর। তাই নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, নতুন নির্বাচিত সংসদকেই সংবিধান রচনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথমত, সংবিধান রচনা, দ্বিতীয়ত, নতুন সরকার গঠন—এ দুটি কাজই নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

বিএনপির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপ:

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় এবং তারা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোও দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে কিছু মহল সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদী ভারতের চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই বিলম্ব করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি:

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, সেটির অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা নির্বাচনের পর সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচন সময়ের দাবি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করাই বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র পথ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন সত্ত্বেও, চূড়ান্ত সমাধান আসতে হবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নির্বাচিত সরকারই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি

আপডেট সময় : ০৪:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মোঃমকবুলার রহমান নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি নির্ভর করে সুসংগঠিত বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ খরায় ভুগছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ পরিবেশ, স্থিতিশীল সরকার এবং মুনাফার নিশ্চয়তা চান। অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকার সে নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। ফলে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগ সংকট:

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী। যদিও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক, তবু সরকারের ঋণ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং আর্থিক খাতে তেমন কোনো সুখবর নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে তার উপস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রমাণ করে যে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং বাস্তব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এক বিষয় নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগকারীরা আসবেন না, এটি ড. ইউনূসও অনুধাবন করেছেন। তাই তিনি নির্বাচনমুখী সংস্কারের পথে হাঁটছেন।

নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ’৭২-এর সংবিধান কার্যত বাতিল হয়ে গেছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর। তাই নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, নতুন নির্বাচিত সংসদকেই সংবিধান রচনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথমত, সংবিধান রচনা, দ্বিতীয়ত, নতুন সরকার গঠন—এ দুটি কাজই নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

বিএনপির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপ:

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় এবং তারা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোও দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে কিছু মহল সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদী ভারতের চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই বিলম্ব করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি:

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, সেটির অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা নির্বাচনের পর সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচন সময়ের দাবি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করাই বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র পথ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন সত্ত্বেও, চূড়ান্ত সমাধান আসতে হবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে।