নির্বাচিত সরকারই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি

- আপডেট সময় : ০৪:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫৮ বার পড়া হয়েছে

মোঃমকবুলার রহমান নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি নির্ভর করে সুসংগঠিত বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ খরায় ভুগছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ পরিবেশ, স্থিতিশীল সরকার এবং মুনাফার নিশ্চয়তা চান। অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকার সে নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। ফলে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগ সংকট:
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী। যদিও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক, তবু সরকারের ঋণ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং আর্থিক খাতে তেমন কোনো সুখবর নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে তার উপস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রমাণ করে যে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং বাস্তব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এক বিষয় নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগকারীরা আসবেন না, এটি ড. ইউনূসও অনুধাবন করেছেন। তাই তিনি নির্বাচনমুখী সংস্কারের পথে হাঁটছেন।
নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ’৭২-এর সংবিধান কার্যত বাতিল হয়ে গেছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর। তাই নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, নতুন নির্বাচিত সংসদকেই সংবিধান রচনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথমত, সংবিধান রচনা, দ্বিতীয়ত, নতুন সরকার গঠন—এ দুটি কাজই নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
বিএনপির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপ:
বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় এবং তারা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোও দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে কিছু মহল সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদী ভারতের চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই বিলম্ব করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি:
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, সেটির অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা নির্বাচনের পর সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচন সময়ের দাবি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করাই বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র পথ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন সত্ত্বেও, চূড়ান্ত সমাধান আসতে হবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে।