চির তারুণ্যের কবি, খোকন সরদার..

- আপডেট সময় : ১২:১২:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩ ১১২৭ বার পড়া হয়েছে

সাব্বির হাসান মিঠু,বিশেষ প্রতিনিধিঃ চির তারুণ্যের কবি, খোকন সরদার,২২ জুলাই ১৯৮৭ খ্রিঃ উত্তর বঙ্গের বগুড়া জেলার অন্তর্গত সদর উপজেলা ৬ নং শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপাল বাড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কবি খোকন সরদারের জন্ম। শৈশব ও কৈশোরের পুরোটাই কেটেছে গৈ গ্রামের মাটিও মানুষের সাথে। ছোট বেলা থেকেই ছড়া ও কবিতার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তাই তো বাংলা বইয়ে থাকা ছড়া কবিতাগুলি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তেন। প্রাথমিক পড়াশোনা কালীন সময়ই অবসরে ছড়া ও ছবি আকাঁ চেষ্টা করতো। কিন্তু শব্দ স্বল্পতা ও স্বাভাবিক জ্ঞান না থাকার কারনেই হয়তো সেসব আর লেখা হয়ে ওঠেনি। আস্তে আস্তে শৈশব কৈশরে পদার্পণ করে কবি। তারুণ্য অন্তরিক্ষ এই কবির সাথে সাথেই বাড়তে থাকে কবিতার প্রতি আগ্রহ এবং পোক্ত হতে কবিতা লিখনীর হাত ইতি মধ্যেই পড়ে শেষ করেন রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি ‘ কাজী নজরুল ইসলামের ‘সঞ্চিতা’ শরৎচন্দ্র চট্রোপাধায়ের ‘কিশোর রচনা সমগ্র’, মারিও পূজো’র ‘গডফাদার’ কবি বিদ্যুৎ জাহিদের ‘বৃষ্টির শব্দ’ কবি শামসুল হকের ‘পাঁচ ফোড়ন বিস্ফোরণ’ ও ছাড়পত্র সহজ অসংখ্য কবিতার বই। সেই সাথে ধারণা জন্মে বরেণ্য লেখকদের লিখনী সম্পর্কে। ২০০২ সালে যখন কবি খোকন সরদার এস এস সি পরিক্ষার্থী। তখন থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। শুধু তাই নেয় তার লেখা কবিতা পাঠক প্রিয় তাও। তার লেখা কবিতা সম্পর্কে জনপ্রিয় গবেষক, মানবাধিকার কর্মি কবি শামসুল হক বলেন, যে সকল তরুণ আপাদমস্তক সৃষ্টিশীলতাকে হৃদয়ে ধারণ করে তাদেরই একজন কবি খোকন সরদার। সমাজ রাষ্ট্র তথা মানুষের তরে কবির যে গভীর ভাবনা তারই বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে তার লেখা কবিতায়। কবিতায় কবি জীবন বোধের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সুনিপুণ কারিগরের পরিচয় দিয়েছেন। প্রেম দ্রোহ, মিলন ও বিরহের যৌতিক সমন্বয় ঘটিয়ে কবি তার শৈল্পিক দক্ষতার সফলতা দেখিয়েছে বিভিন্ন কবিতার বিষয় বস্তুতে। শুধু তাই নেয় অতি অল্প বয়সে কবি তার লেখনীর হাত পোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার মতে অবক্ষয়ের এই সময়ে কবি খোকন সরদারের মতো তরুণ গুলো জাতিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে বহুদূর হেটেও যায়। কবিতা পাঠক প্রিয়তা হওয়ার কারনে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে তার লিখনী। যা ফলশ্রুতিতে ২০২০ জয়পুরহাট লেখক ফোরাম সাহিত্য সম্মাননা পুরস্কার পান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ এ এই তরুণ বয়সে কবি খোকন সরদারের লেখা প্রথম “রঁজক” কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এতো অল্প বয়সে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা বাংলা সাহিত্যে বিরল। সেই সাথে অর্জন করেন তরুণ কবি হিসেবে সকল বয়সী পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। কারণ অনবদ্য ও সাবলীল তার প্রতিটি ছড়া ও কবিতা।
বিস্ময় জাগানিয়া অন্তমিল ও ছন্দের কারুময় ব্যবহার যা কবিতার প্রাণ কতো অনায়াসে সাজিয়েছেন তার কবিতায়। শুধু তাই নয় শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন এবং বহুমাত্রিকতায় সমৃদ্ধ তার লেখা কবিতা। তার প্রতিটি লেখায় পাওয়া যায় প্রকৃতির নিবিড় নির্জনতা, সৌন্দর্য, মাটি ও মানুষের কথা। তাছাড়া তার বেশ কিছু কবিতায় উঠে এসেছে অসহায় নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ দুঃখ এবং অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। যেমনঃ “কেন আমি পরাধীন” কবিতায় খোকন সরদার বলেছেন -‘একাকিত্বর সুযোগ নিয়ে যারা করে ধর্ষণ// তাদের বুকে চলতে থাকুক ছোড়া গুলি বর্ষণ।// হোক মানবতার সু-দর্শন!// ঘরে থাকা হীরা তনু কে যারা করে ধর্ষণ// তাদের অপাশবিক গর্জন করতে হবে বর্জন।//এ-ই হলো কি স্বাধীনতার অর্জন?/ আমি লজ্জিত আমি স্বাধীন বাংলার নাগরিক//লক্ষ মায়ের লুন্ঠন ইজ্জতে, হয়েছে বাংলা স্বাধীন,//তবুও কেন আমি পরাধীন? শোধ কি দিতে পারবো হীরার “মা’র ঋণ?/ আমি লজ্জিত আমি স্বাধীন বাংলার নাগরিক তারা-ই ধর্ষণ কারী তাদের নেই কোন সদাচারী,//তারা-ই দেশের অনাদরী।// নির্লজ্জ ধর্ষণ কারীকে করে যে আমার ঘৃণা,// ফলন দাতা মায়েদের কেমনে করে জিনা?// আর কতো দেখবো, পড়বো শিরোনাম ;// দায়িত্ব বান সুশীলদের আছে কি সম্মান?// ঘৃণা ধরেছে, অত্যাচারীদের উপর// ঘৃণা ধরেছে বাংলার ধর্ষণ কারীদের উপর।// কোথায় সিজদাহ্ দিলে মাওলা কবুল করবে বলো? দিলের চাইতে বড় কাবা থাকলে আমায় তুমি বলো।// চলছে দিনে রাতে অমানোবিক নির্যাতন,/
তবুও কেন হয় না সুশীল সমাজ সচেতন।// হয় না কেন মানবতার উন্নয়ন?/ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আমি স্বাধীন বাংলার সন্তান/ এটাই কি মোর অবস্থান?/ আমি চাই মুক্ত বাতাসের হাওয়া/ আমি চাই অপদস্ত মুক্ত বাংলার মাকে।/ খোদা তোমার কাছে শুধু একটাই পাওয়া,/ সকল ‘মা’দের ইজ্জত রক্ষার ছায়া।’
তার লেখা কবিতায় পাওয়া যায় যাপিত জীবনের দুঃখ যন্ত্রণাকে মোকাবেলা করার সাহস। যে বয়সে তরুনদের কবিতা পড়ার প্রতি আগ্রহ থাকেনা সে বয়সেই খোকন সরদার লিখেছেন পূর্ণাঙ্গ একের অধীক কাব্যগ্রন্থ। অতি অল্প সময়ে কাব্য রচনা ও সাহিত্যের সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেন ‘সাহিত্য সম্মাননা’ ২০২১’। ২০২০ সালে সমমনা কিশোর দিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সংকলন’ নামক একটি সামাজিক সংগঠন। এছাড়াও তিনি এসোসিয়েশন ফর কমার্শিয়াল আর্টিস্ট সংগঠনের তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাহী কমিটি, তাছাড়া বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে তার লেখা কবিতা বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে ‘তোমার অপেক্ষায়’, ‘যৌথ প্রেম’ ‘অবাধ্য বর্ষা’ ‘সংগ্রাম’, বাংলার উদীয়মান কবি, পরানের গহীনে, একুশ আমার অহংকার, নির্বাচিত প্রেমের কবিতা, ৫০০ কবির কবিতা উল্লেখযোগ্য। হয়তোবা একদিন এই কবিতার মাধ্যমেই কবি খোকন সরদার স্থান করে নেবে বাংলা সাহিত্যে ও কোটি মানুষের হৃদয়ে, হয়ে ওঠবে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলামের মতো মহাকালের কবি। তার শত কবিতার মাঝে একটি কবিতা……..”সোনার মুখ”
অমৃত স্বাদে ভরে উঠুক-
জমিদারের কাচারি,
আপন স্বাদে সমাজ গড়ুক
সুস্থ নীতির কারবারি।।
অমৃত স্বাদে ভরে উঠুক
সমাজ নামের সংসারে,
মহৎ কাজে ঝাপিয়ে পরো-
পাশে থাকা শ্রোতাদের।।
অমৃত স্বাদে ভরে উঠুক-
সামনে থাকা পথ পথিক,
আপন গুনে ছড়িয়ে যাবে-
সুস্থ দেহের সঠিক দিক।।
অমৃত স্বাদে ভরে উঠুক-
কলব্ থেকে মধুর সুর,
সামনে থাকা মুসাফিরের-
ভরিয়ে আসুক দিল মধুর।।
অমৃত স্বাদে ভরে উঠুক-
মা জননীর সেবার সুখ,
কবি’র কলম লিখতে থাকুক
গর্ভে থাকা সোনার মুখ।।