মিনহাজুল হককে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ স্কুল পড়ুয়া তরুণীর বিরুদ্ধে

- আপডেট সময় : ০২:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩ ২২৬ বার পড়া হয়েছে

লায়লার নির্দেশে ১৯ মে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় লায়লার মামাতো ভাই ও ৫ সহযোগী মো.মিনহাজুল হককে সুজাইলহাট মোড়ে হত্যার চেষ্টা করে।
মিনহাজুল হক নওগাঁর মহাদেবপুর এনায়েতপুর ইউপির মোল্লাপাড়া গ্রামের মহসিন মন্ডলের ২য় ছেলে।
জানা যায়, ২৫ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টায় মিনহাজুল হক বাড়ি থেকে বের হয়ে মহিনগর নদীতে যান তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে। ফেরার পথে পেছন থেকে চারজন অপরিচিত লোক তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে তারা অন্য রাস্তা ধরে মহিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গ্রামের প্রধান সড়কে এসে থামে। এসময় মিনহাজুল হক গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইলে তারা তাকে বাধা দিয়ে মহিনগর স্কুলের পেছনে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা ৩০-৪০ জনে বৃদ্ধি পায় যাদের বয়স প্রায় ২০-৩০ বছর।
মিনহাজুল তার নিজের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে: আমাদের এলাকায় এটা চলবে না ভাই। এ পর্যন্ত অনেককে ধরেছি, কাউকে ছেড়ে দেইনি, কারো হাত ভেঙ্গেছি, কারো পা ভেঙ্গেছি, কারো মাথা ফাটিয়েছি। এসময় মিনহাজুল হক থানায় ফোন করার জন্য মোবাইল ফোন বের করলে তার হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়।
মিনহাজুল হক আরও বলেন, তারা তার ফোন থেকে অন্য ফোনে বিভিন্ন তথ্য চুরি করেন। অবশেষে তাকে ছেড়ে দিতে মোটা অংকের টাকা দাবি করে হোসেন নামের এক যুবক। মিনহাজুল হক তখন নিজেকে আলোর সন্ধান নিউজ পোর্টালের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পরিচয় দেন। তখন সাংবাদিক বলে তারা সাংবাদিকতা পেশাকে কটুক্তি করে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
অবশেষে তার মানিব্যাগ বের করে ৫৪০০ (পাঁচ হাজার চারশত) টাকা চুরি করে। জোর করে পিন নিয়ে সমস্ত মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট চেক করে এবং নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে 01315-182614 নম্বরে ৯৫০ (নয়শত পঞ্চাশ) টাকা পাঠান। আর তারা মিনহাজুল হকের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তোলে।
ঘটনার কারণ জানতে চাইলে মিনহাজুল হক বলেন- আমি সেদিন আমার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। যেটা আমার আর আমার প্রেমিকার বাড়ির সকলেই একথা জানত। তারপর থেকে তারা আমাকে ফলো করেছে এবং আমাকে আটক করেছে, আমাকে হয়রানি করেছে এবং বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে।
সেদিন তাদের পরিচয় না জানার কারণে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ঘটনার পরের দিন ২৬ এপ্রিল বিষয়টি এলাকায় প্রচার হলেও সঠিক তথ্য প্রকাশ না করে তারা প্রচারণায় অনেক মিথ্যা অভিযোগ তোলে এবং এর প্রধান নেত্রী লায়লা। লায়লা মহিনগর গ্রামের মোঃ মিন্টুর ছোট মেয়ে। বয়স আনুমানিক ১৫ বছর। সে মহিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
তিনি আরও বলেন- লায়লাকে আমি প্রায় ২ বছর আগে থেকে চিনি। তার সাথে আমার ভাই বোনের সম্পর্ক ছিল। তার বিপদের কথা জানিয়ে আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিলেন, আমি তাকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তাকে টাকা ফেরত দিতে বললে সে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে। এতে আমি তাকে বললাম ঠিক আছে তুমি তোমার মতো থাক আমি আমার মতোই থাকবো। কিন্তু আমি এখনও জানি না কেন সে আমার পিছু ছাড়ছে না। সবসময় আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে। লায়লা আমার প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধে অনেক বাজে কথা বলেছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। হঠাৎ আমার প্রেমিকার বাড়ির লোকজন আমাকে খারাপ ভাবতে শুরু করে।
গত ১৯ মে শুক্রবার মিনহাজুল হককে তার প্রেমিকার বড় বোন ও তার শ্যালক তাদের বাড়িতে ডেকে নেন। যার জেরে মিনহাজুল হক দিনাজপুর থেকে তাদের বাড়িতে চলে যান। প্রেমিকার বাড়ির সবার সঙ্গে বিয়ের কথা আলোচনা করে সন্ধ্যা ৭টার কিছুক্ষণ আগে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
লায়লা জানতে পারেন যে মিনহাজুল হক তার প্রেমিকার বাড়িতে এসেছেন, তাই লায়লা তার মামাতো ভাই মো: শিহাব ও তার সহযোগীসহ ৬/৭ জনকে নিয়ে সুজাইল মোড়ে অবস্থান করে। মিনহাজুল হক মহিনগর থেকে সুজাইল মোড়ে গিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। সিগারেট ও কোল্ড ড্রিংকসের কথা বলে শিহাব ও তার সহযোগীরা তাকে নির্জন এলাকায় নিয়ে যেতে চাইলে মিনহাজুল হক রাজি হননি এবং তিনি সিগারেট খান না বলেও জানান তাদের।
এরপর তারা মিনহাজুল হককে ভাই সম্বোধন করে কথা বলার জন্য ৫ মিনিট সময় চান। এরপর মিনহাজুল হক সুজাইল মোড় জামে মসজিদের সামনে যেতে রাজি হন এবং সেখানে যাওয়ার পর তাকে ধাক্কা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে দূরে সরে নিয়ে যান। আর তার কাজিন বলতে থাকে লায়লা আমার বোন তুমি তার সাথে যা করছ তার সব ভিডিও আমার কাছে আছে। আজ তোকে মেরে ফেলব। মিনহাজুল হক বলেন, আমাকে কথা বলার সুযোগ দিন আমি তার সঙ্গে কিছু করিনি। জীবনে কোনো মেয়েকে স্পর্শ করিনি। এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে আরও দুজন যোগ দেন, তাদের একজনের হাতে ছিল ২টি কাঠের ক্রিকেট স্টাম্প এবং অন্যজনের হাতে ছিল ২ ফুট লম্বা লোহার রড।
তখন মিনহাজুল হক চিৎকার শুরু করলে তার ডাকে ২ জন রাস্তার ভদ্রলোক মিনহাজুল হককে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দেয়। এতে বেঁচে যান মিনহাজুল হক। তিনি জানান, পরিচয় না জানার কারণে মিনহাজুল হক তাদের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা নিতে পারেননি। পরের দিন মিনহাজুল হক তার প্রেমিকার বাসায় ফোন করলে তারা সাফ জানিয়ে দেন, তার সঙ্গে মিনহাজুল হককে বিয়ে দিবেন না। এরপর থেকে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমুর মাধ্যমে বিভিন্ন হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসছে। যার অডিও সংরক্ষিত আছে।
মিনহাজুল হক বলেন- লায়লার নির্দেশেই এসব হচ্ছে। আমি গত ২০ মার্চ লায়লাকে ফোন করি এবং তাকে আমার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি কিন্তু সে তা অস্বীকার করে এবং বলে যে আমি আপনার সম্পর্কে কাউকে বলিনি বা আপনাকে হত্যা করার জন্য লোক পাঠাইনি। কিন্তু সত্য আমার কাছে পরিষ্কার।
তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রমাণ সংগ্রহ করছি। আমি শীঘ্রই একটি পুলিশ মামলা করব এবং সমস্ত চ্যানেল, আইপি টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া এবং নিউজ পোর্টালের মিডিয়া কর্মীদের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলন করব।