সিংগাইরে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়: বিপাকে গরিব শিক্ষার্থীরা!
- আপডেট সময় : ০৪:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২৩০ বার পড়া হয়েছে
আতিকুল ইসলাম, সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে এ অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে মহামান্য হাইকোর্টের সুয়োমোটো রুল ২৫/২০১৪ মোতাবেক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষা বোর্ডের এমন হুঁশিয়ারি থাকলেও এর কোনটিই মানছেনা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, এসএসসির ফরম ফিলাপের সময় স্কুলের কোচিং ফি বাবদ তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এছাড়া নির্বাচনি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এক বিষয়ে ১ হাজার টাকা, দুই বিষয়ে ৩ হাজার টাকা, তিন বিষয়ে ৫ হাজার টাকা এবং চার বিষয়ে ১২ হাজার টাকা পর্যন্তও আদায় করা হচ্ছে। এমনকি ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে না রসিদ। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণ করেছে কেন্দ্র ফি সহ ২ হাজার ১৪০ টাকা। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ২০ টাকা। অথচ ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ইসরাফিল ও কো-অপ্ট সদস্য জহির উদ্দিন এর নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছেন ইচ্ছেমতো টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছর এ স্কুল থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ২৪২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতা সহ পূর্বের প্রধান শিক্ষককে মারধরের নানান অভিযোগও রয়েছে। কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের বেতন কেটে নেওয়া, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। কিন্ত এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্নের পাশাপাশি অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে।
স্কুলের একাধিক শিক্ষক দাবি করেন, বর্তমানে স্কুলে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হচ্ছে। শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অন্যায় ভাবে একাডেমিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে যা সম্পূর্ণ বে-আইনি। এসএসসি ফরম পূরণেও অতিরিক্ত টাকাও নিচ্ছে যা তারা করতে পারেনা। কিন্তু এসব বিষয়ে কেউ কোন কথা বলতে চাই না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অভিভাবক সদস্য ইসরাফিল অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, আমি কোন বক্তব্য দিবোনা সব কিছু হেড স্যার জানেন আপনি ওনার সাথে যোগাযোগ করেন।
সাহরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, নজরুল ইসলাম অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্কুলে শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য স্যারদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় তাই কোচিং ফি বাবদ ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। যাদের সামর্থ নেই তাদের কোচিং ফি দিতে হয় না। বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে টাকা নেওয়া হয়েছে এটা জামানত ফেরৎ যোগ্য। এসব টাকা আদায়ের জন্য কোনও রেজুলেশন করা হয়নি। রসিদ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ফরম পূরণকালে শিক্ষার্থীদের বোর্ডের টাকার মানি রিসিট দিয়েছি। অতিরিক্ত কোনো রসিদ দিইনি এটা সত্য। তবে এখন থেকে সবাইকে রসিদ দেয়া হবে।
এ ছাড়াও ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) রেবেকা জাহান জানান, আসলে এগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলতে পারবেন। তাছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফির বাইরে একটি টাকাও নিতে পারবেনা। যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে তাহলে স্কুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।