শাজাহানপুরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার প্রধান আকর্ষন জুয়া!
- আপডেট সময় : ০৯:০৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
বগুড়ার শাজাহানপুরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার প্রধান আকর্ষন জুয়া! সরেজমিনে দেখাগেছে লটারির টিকিট বিক্রির জমজমাট প্রচারণা। মাইকে বলা হচ্ছে, ভাগ্য পরিক্ষা করুন ‘আপনি নিজের জন্য কেনা টিকিটে মোটরসাইকেল নিন, স্ত্রীর জন্য নিন সোনার গহনা আর বাচ্চার জন্য টেলিভিশন। শ্রমিক ভাইয়েরা মাত্র ২০ টাকাতেই পেতে পারেন একটি করে দেড় লাখ টাকা মুল্যের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। বলা তো যায় না, ভাগ্যে থাকলে ঠেকায় কে?’ প্রচারণা গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। গত ৪ ফেব্রয়ারি থেকে মেলা শুরু হওয়ার পর ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় লটারির আয়োজন।
সোমবার এই মেলায় পুরস্কার হিসেবে ১০টি মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ কয়েক লাখ টাকার সোনার গহনা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে। টিকিট বিক্রি বেশি হওয়ায় প্রতিদিন পুরস্কারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। শেষের দিন একটি নতুন প্রাইভেট কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা।
এদিকে গণমাধ্যমে যাতে মেলার নামে জুয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে সে জন্য প্রতিদিন ৫ লাখ টাকার ‘সালামি’ বিভিন্নজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মেলা সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসন বলছে, লটারির কোনো অনুমোদন নেই, এটি অবৈধ। তবু থেমে নেই লটারির কার্যক্রম। আমরা অনেকটাই অসহায়।
জানাগেছে, এই লটারির বিষয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়। তবু বন্ধ হয়নি এই লটারি। জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে মেলায় লটারির নামে জুয়া বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না আয়োজকরা। বরং আয়োজকরা প্রথমে লটারির টিকিট বিক্রি শহরে করছিল। এখন ছড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের আনাচে-কানাচে।
লটারি জুয়া প্রসঙ্গে রাওয়ার এইচআর প্রধান মোস্তফা জামান ডালিম বলেন, আমাদের সংগঠনের সৌজন্যে বগুড়ায় একটি মেলা চলছে, এটি ঠিক। তবে সেখানে লটারি কিংবা এর অনুমতি বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
মেলায় লটারি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু বলেন, যারা টিকিট কিনছেন তাঁরা মেলায় না এলেও পুরস্কার পাচ্ছেন, তাই টিকিট কিনছেন। তবে দুই-তিন দিনের মধ্যে আমরা লটারির কার্যক্রম বন্ধ করবো।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, মেলার কর্তৃপক্ষকে লটারি বন্ধ করতে বলা হলেও তারা বন্ধ করছে না। বিষয়টি আমি বগুড়া জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি নির্দেশনা দিলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এই মেলা ও লটারির অনুমোদন দেইনি। ইতোমধ্যে আয়োজকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানতে পেরেছি, চিঠি দেওয়ার পরও তারা লটারি বন্ধ করেনি। আমরা কেবল নেটওয়ার্কে লটারির ড্র সরাসরি প্রচার বন্ধে চিঠি দিয়েছি। লটারির কার্যক্রম বন্ধ না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শরাফত ইসলাম বলেন, লটারি বিক্রি কিংবা মেলার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চ বলতে পারবে। তবে জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোতাহার হোসেনও একই ধরনের মন্তব্য করেন।