লবণ চাষীদের নিরব কাঁন্না, দেখার কেউ নেই!
- আপডেট সময় : ০৫:৫০:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজারের মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এখন গোটা উপজেলায় পুরো দমে চলছে মাঠে লবণ উৎপাদন। মাথার ঘাম পায়ে পেলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। লবণের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ চাষি। অনেক চাষিরা চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আজ ১২ মার্চ (রবিবার) দুপুর ১. ৩০ মিনিটের সময়, সরেজমিন দেখা গেছে, বিশাল মাঠজুড়ে লবণের স্তূপ। লবণ শ্রমিকরা তপ্ত রৌদ্রে মাঠে কাজ করছেন। কালো পলিথিনে সারি সারি লবণের প্লট বা বেড। ওই বেডের পলিথিনের উপর সাদা লবণের দানা। আর কেউ বেড থেকে লবণ কুড়িয়ে বিশাল স্তূপ সাজিয়ে রাখছে।
অনেকেই দেশের সাদা সোনা নামে খ্যাত করেছে এই উৎপাদিত লবণকে। মাঠের শ্রমিকরা ওই বেডে খরা লবণের পানি ছিটাচ্ছেন। শ্রমিকের শরীর থেকে ঝরঝর করে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে। এই তপ্ত রৌদ্রকে তোয়াক্কা না করে পুরোদমে কাজ করছে শ্রমিকরা। এসময় চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় অসাধু লবণ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে দাম কম দিচ্ছে, পুরো ঘোনা তাদের দখলে নিয়ে, বর্গা হিসেবে মাঠ দিয়ে চাষীদের জিম্মি করে রেখেছে, গত কয়েক বছর চাষীদের ব্যাপক ঘাটতি থাকায়, এমপি আশেক উল্লাহ রফিক সংসদে লবণে দাম বাড়ানোর আবেদন করে, পরে সরকারিভাবে লবণের দাম বাড়ানো হলেও তোয়াক্কা করছেনা এসব অসাধু লবণ ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সরকারি ঘোষিত প্রতি মণ লবণের দাম ৫শ টাকা নির্ধারণ করলেও, সে সব ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাঠ পর্যায়ে চাষীদের ২৫০শ থেকে ৩০০ টাকা করে দিচ্ছেন। এসব অমানবিক আচার আচরণ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই অর্ধেক সিজনে মাঠে থেকে সরে যাচ্ছে।
জসিম উদ্দিন জানান, ছয় মাস অর্থাৎ লবণের সিজন পর্যন্ত এককানি (৩৯) শতাংশ জমির লাগিয়ত ৪০/৫০ হাজার , একজন লেবারের বেতন ৬০/৭০ হাজার, পলেথিন ৮ হাজার, পানি-তেল ৫ হাজার, অন্যান্য ১০ হাজার সহ ১ এক লক্ষ ২৩ তেইশ হাজার টাকার খরচ আসেন। পুরো সিজন লবণ বিক্রি করলে পাই দেড় লক্ষাধিক টাকা। আমরা সিজন শেষে পেটে ভাতেও থাকতে পারিনা, ছয় মাস লবণে মাঠ করে পুরো বছর ঋণের বোঝা বহণ করতে হয়।
আরও জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে যেমন লবণ কেনা-বেচায় জুলুমি চলছে, তেমনি পরিমাপেও চলছে সীমাহীন চুরি। প্রতি মণ লবণে নিচ্ছে ৭০ কেজি, অনেকেই এর থেকে বেশি নিয়েও মণ ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছে অসহায় চাষীদের। প্রতিবাদের সুযোগ নাই, কিছু বললেই লবণে টাকা বকেয়া থাকে যায়।
এদিকে পলিথিনেও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে, চাষীরা বলেন-মাঠে ব্যবহৃত পলিথিনগুলো প্রতি পাউন্ড বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা, আর আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছে ৮০ টাকা। এভাবে হিসাব করলে প্রতি কানি পলিথিনে ১৩শ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে। তাই আমরা সকলে ঐসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক (এমপি) দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
এ উপজেলার কয়েক হাজার একর জমিতে লবন উৎপাদন করা হচ্ছে। লবন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম কমিয়ে একের পর এক চাষীদের হয়রানি করে যাচ্ছে। অসহায়-দিনমজুর, শ্রমিকরা দিশাহারা হয়ে পড়ছে। এখন প্রায় সিজন শেষের দিকে মাত্র দুই মাস বাকী এরমধ্যে অনেকেই জমি লাগিয়ত অর্ধেক বাকী, পলিথিনের টাকা ও লেবারদের বেতন পরিশোধ করার আগেই জিসন শেষ হয়ে যাবে। যার ফলে চাষীদের মাথায় হাজার টাকা ঋণের বোঝা উঠে যাবে।