মহেশখালীতে শীর্ষ বনদস্যুর কবলে প্যারাবনঃ অসহায় বনবিভাগ
- আপডেট সময় : ০৮:১৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ১২৮ বার পড়া হয়েছে
মফিজুর রহমান, মহেশখালী প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের মহেশখালীতে উপজেলার উপকুলীয় হোয়ানকে প্যারাবন উজাড় করে খালের উপর বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য সবুজ প্যারাবন সৃজন করা হয়েছিলো।
সেই প্যারাবনের গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। প্যারাবন নিধনের কারণে পরিবেশ চরম ক্ষতির পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
মহেশখালী রেঞ্জের আওতাধীন হোয়ানক বনবিটের অধীনস্থ পানিরছড়ার পশ্চিমে অমাবশ্যাখালী মৌজার হেতালিয়াঘোনার সাথে লাগোয়া সরকারি প্যারাবনে কেটে চিংড়ি ঘের নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পানিরছড়ার প্রভাবশালী বনদস্যু শাহাব উদ্দিন।
জানা যায়, ঘের দখল করতে স্কেভেটার দিয়ে কাজ অব্যাহত রাখায় পাশ্ববর্তী লবণ চাষিসহ উপকলীয় এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।অপরদিকে প্যারাবনের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ে সাগরে পানি উপকূলে উঠার সম্ভাবনা ও রয়েছে। এ বিশাল প্যারাবনে রক্ষা করেছে, উপজেলার লাখ মানুষে জীবন।
স্থানীয় লবণ চাষি জয়নাল, মাজেদ, দিলসাদ, আব্দুল্লাহ, সাগরসহ আরও কয়েকজন জানান- এই চিংড়ী ঘেরটি এড. সিরাজুল মোস্তফা ও আনোয়ার পাশা চৌধুরীর। এই চিংড়ি ঘেরটি মোহরাকাটার মুহিবুল্লাহর পুত্র শাহাব উদ্দিনসহ কয়েকজন মিলে শত শত শ্রমিক দিয়ে হাজার হাজার প্যারাবনের বাইন গাছ কেটে স্কেভেটার দিয়ে মাটি কেটে চিংড়ী ঘের ও লবণ মাট টি নির্মাণ করেছে।
কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার একর জমি দখল হারাচ্ছেন বনবিভাগ। ওই সিন্ডিকেট উপকলের শতাধিক একর প্যারাবন কেটে ইতোমধ্যে সাবাড় করে ফেলেছে। চ্যানেলের হেতালিয়াঘোনাতে মাছ ধরার জেলে ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত কাঁকড়া সংগ্রহকারীরা জানান, প্রভাবশালীরা প্যারাবন ও নদী দখলের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকায় দৈনন্দিনের আয় একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। নদী রক্ষা এবং আহার জোগাড়ের সহায়স্থলটি নদী খেকোর অবৈধ দখল থেকে উম্মুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র প্রায় ১৫দিন ধরে নির্বিচারে প্যারাবন উজাড় করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে খালের দুইপাশে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এবং তাদের সঙ্গে বেশ কিছু চিহ্নিত ডাকাত দখলকাজে জড়িত থাকায় জায়গার সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তারা তাদের বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেননা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরীর জানান- এসব তাদের বৈধ জমি, এলাকার অনেকের জমি আছে তাতে। বাঁধের বাইরেও তাদের অনেক বৈধ জমি আছে। কাগপত্রমূলে তাদের বৈধ জমিতেই কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান- কিছু শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে ভূমিদস্যুরা প্যারাবন কেটে অবৈধ ভাবে দখল নিচ্ছে সরকারি জায়গা। গত ডিসেম্বর এই জায়গায় অভিযান চালিয়ে বাঁধ কেটে দিয়ে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছিল। তারপর আবারও তারা ৫ একর সরকারি প্যারাবনের বাইন কেটে প্রায় ৩৫ একর জায়গা দখল করেছে। যদিও এখানে এসে কয়েকজন শ্রমিক সিরাজুল মোস্তফা ও আনোয়ার পাশা চৌধুরীর নাম বলতেছে। আসলে কি তাঁরাও জড়িত নাকি তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যবহার করতেছে তা তদন্ত করা হবে। আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহেশখালী থানার ওসি প্রনব চৌধুরী বলেন, সরকারি প্যারাবন নিধন করে অবৈধ ভাবে সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। বন বিভাগকে সহযোগিতা করে সমন্বয় করে সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে কাজ করছি এবং প্যারাবন নিধনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।