ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাঃ বিপি দাসের চিকিৎসা অবহেলায় আদালতে মামলা
- আপডেট সময় : ১০:১৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাপ্পি আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের নিউ ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের ডাঃ বিষ্ণুপদ দাস (বিপি দাস) এবং তার সিরিয়াল-ম্যান মোঃ রানা মিয়ার নামে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে গত ২৯ জানুয়ারি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মোছা: লিজা আক্তার। আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
লিজা আক্তারের ছেলে রানা’র দুর্ঘটনায় আহত হয়ে নিউ ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসা করা যায়। দুর্ঘটনা কবলিত পায়ের চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে তিনি এ মামলা দায়ের করেন।
লিজা আক্তার দাবি করেছেন শহরের কুমারশীল মোড়ের নিউ ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের ডাঃ বিপি দাস ও তার সিরিয়াল-ম্যান উন্নত মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তার ছেলে রানা’র পায়ে অপারেশন করার কথা বললেও নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। এতে তার ছেলের পায়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে, যার ফলে দ্বিতীয়বার অপারেশন করাতে হয়।
কিন্তু দ্বিতীয়বার একই রকম চিকিৎসা করানোর ফলে লিজার ছেলের পায়ের কোনো উন্নতি ঘটেনি, উলটো বিকলাঙ্গ হওয়ার পথে। ঢাকায় জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ডাক্তার মাহবুবর রহমানকে দেখানোর পরই তিনি জানতে পারেন ডাক্তার বিপি দাস অবহেলা করে অপচিকিৎসা করেছেন,কারণ ডাঃ মাহবুব বলেছেন চিকিৎসা সরঞ্জাম উন্নত মানের লাগানো হয়নি। ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে ডাঃ বিপি দাস ও তার সিরিয়াল-ম্যান রানা’র কাছে গেলে তারা মোছা: লিজা আক্তারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাকে হুমকি প্রদান করে।
এ ব্যাপারে নিউ ল্যাব এইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক কন্সালটেন্ট ডাঃ বিষ্ণুপদ দাস (বিপি দাস) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যে কোম্পানির চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারের কথা রোগীর মা-কে বলেছিলাম সেটাই অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি রোগীকে তিন মাসের বেড রেস্ট দিয়েছিলাম কিন্তু রোগী সে নির্দেশনা না মেনে গাড়িতে চলাফেরা করেছে। দ্বিতীয় বার অপারেশনের পরও রোগী একইরকম কাজ করেছে। তাই রোগীর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আমি তাদেরকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে বলছি। তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়নি।
ডাক্তারের পরামর্শ অমান্য করার ব্যাপারে জানতে লিজা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার বিপি দাস সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। আমার ছেলে মাসের পর মাস বাসায় পড়ে থাকতে থাকতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি ডাক্তার বিপি দাসের কাছে আমার ছেলেকে মানসিক ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তিনি মানসিক ডাক্তার দেখানো লাগবে না বলে জানান এবং আমার ছেলেকে মাঝে মাঝে একবার বাহিরে ঘুরিয়ে আনার পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, আমি কুমারশীল মোড়ে আলিফ হাসপাতালে ডাঃ দীপংকর স্যারকে দেখাইছি উনি বলছে যে-সব চিকিৎসা সরঞ্জাম আমার ছেলের পায়ে লাগানো হয়েছে সেগুলো সাধারণত হাতে লাগানো হয় পায়ের চিকিৎসা সরঞ্জাম আলাদা,এমনকি ডাঃ মাহবুব আলমও একই কথা বলেছেন। ডাঃ বিপি দাস আমার ছেলেকে এবং আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে তিনি নিজের দোষ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি এ ব্যাপারে সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি বিএমডিসিতে (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) অভিযোগ দিবো।
নিউ ল্যাব এইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদ মিয়া বাবুল বলেন, চিকিৎসা অবহেলা কিংবা রোগীর এটেন্ডেন্সের সাথে খারাপ আচরণের কোন অভিযোগ আমি পাইনি।
আদালতে দেয়া এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ০১/০৭/২০২৩ইং তারিখে মোছা: লিজার ছেলে রানা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে তার ডান পা ভেঙে সিরিয়াল-ম্যান রানা’র পরামর্শে ডাঃ বিপি দাসের নিকট চিকিৎসা দিতে নিয়ে যান। আহত রানাকে তাৎক্ষণিক পায়ের অপারেশন এবং পায়ে উন্নতমানের রড সংযোজন করার চিকিৎসার অজুহাতে লিজাকে অস্ত্রোপাচারের ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসাবে ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা দেওয়ার জন্য বলে। মোছা: লিজা তাদের কথায় সরল বিশ্বাসে রাজী ও সম্মত হয় এবং সেদিনই তার ছেলের অস্ত্রোপাচার সুসম্পন্ন হয়। তারপর গত ০৩/০৭/২০২৩ ইং তারিখে রোগীকে রিলিজ প্রদান করে। রিলিজ প্রদানের সময় ডাক্তার লিজাকে আশ্বস্ত করে যে, নিয়মিত ঔষধ সেবনে শীঘ্রই রানার পা সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাবে।
কিন্তু রোগীর পায়ের অবস্থা দিন-দিন অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় গত ১৬/০৯/২০২৩ ইং তারিখে পুনরায় রোগী রানাকে ডাঃ বিপি দাসের চেম্বারে নিয়ে গেলে আবারও নগদ ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা গ্রহণ করে ২য় বার রোগীর পায়ে অস্ত্রোপচার করে। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পরও রোগীর পায়ের অবস্থার কোনপ্রকার উন্নতি না হওয়ায় রোগীর মা লিজা নিরুপায় হয়ে তৃতীয় বারের মত ডাক্তার বিপি দাস ও তার সিরিয়াল-ম্যান রানা’র সাথে যোগাযোগ করে তার ছেলে রানা’র চিকিৎসার অবনতির কথা বর্ণনা করে সুপরামর্শ চাইলে বিপি দাস ও তার সিরিয়াল-ম্যান রানা মোছা: লিজার উপর চরম উত্তেজিত হয়ে তাকে গালিগালাজ করে ও প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে সিরিয়াল-ম্যান রানা তাকে টানা হিঁচড়া করে গলায় ধাক্কা দিয়ে ডাঃ বিপি দাসের নির্দেশে চেম্বার হতে বের করে দেয়।
তখন লিজা নিরুপায় হয়ে তার ছেলে রানাকে সুচিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকা’র জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ মেডিকেল সার্ভিসেস লি: হাসপাতালে নিয়া যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মাহাবুব আলম (খোকন) কে দেখালে ডাঃ মোঃ মাহাবুব আলম (খোকন) রানা’র পায়ের ভুল চিকিৎসা ও অপব্যবস্থাপনার জন্য ডাঃ বিপি দাস ও তার সিরিয়ালম্যান রানাকে দায়ী করে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ না করলে রানা’র পা চিরতরে বিকলাঙ্গ হওয়ার সমূহ সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।
মোছা. লিজার স্বামী প্রবাসী হওয়ায় তিনি ডাঃ বিপি দাস ও তার সিরিয়ালম্যান রানা’র নিকট যেয়ে স্বাক্ষীদের সামনে সুবিচার চাইলে এবং এরকম অপব্যবস্থাপনার ও প্রতারণার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ডাক্তার ও তার সিরিয়ালম্যান লিজাকে হুমকি প্রদান করে বলে যে, এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে লিজাকে সন্ত্রাসী লাগাইয়া খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে।
এমতাবস্থায় ডঃ বিপি দাসের অবহেলার কারণে তার নিকট ২ বারে অপারেশন চার্জ হাসপাতালের বিল বাবদ মোট ৩,০০,০০০/- (তিন লাখ) টাকা এবং পরবর্তী ঢাকায় চিকিৎসা বাবদ সর্বমোট ৪,৫০,০০০/- টাকা মোছা: লিজার আর্থিক ক্ষতি সাধনসহ তার ছেলের পা বিকলাঙ্গ হওয়ার সমূহ সম্ভবনা ঘটিয়ে দণ্ড বিধির ৩৩৮/৩২৩/৩৫৪/৩৪/৫০৬ (২) ধারায় অপরাধ করেছে।