বগুড়া শেরপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে সাংবাদিক সংগঠন।
- আপডেট সময় : ০২:৫২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩ ২৪৭ বার পড়া হয়েছে
বগুড়া শেরপুরের অলিগলিতে গড়ে উঠছে সাংবাদিক সংগঠন। এসব সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যদের ভয়ে আতঙ্ক হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ সহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও ছোট-বড় মাজারি ব্যবসায়ীরা। মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চা-বিক্রেতা, রাজমিস্ত্রি, দলিল লেখক, হোটেল বয়, রুটি মেকার, স্বর্ন শ্রমিক, টিসিবির পণ্য বিক্রেতা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ও দপ্তরি, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, ভ্যান চালক, রিকশাচালক, সিএনজি চালক, বিয়ে বাড়ির ভিডিও ম্যান ও ক্যামেরা পারসন, বিভিন্ন সময় মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক অরাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, দিনমজুর, মিলকারখানার শ্রমিক সহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ এসব সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য।
বিশেষ করে ২০১৩ সাল হতে বগুড়া শেরপুরে সাংবাদিক সংগঠনগুলো মাথা চারা দেওয়া শুরু করেছে। এর পূর্ব পর্যন্ত শেরপুরে একটি সাংবাদিক সাংগঠন ছিল তা হল শেরপুর প্রেসক্লাব। কিন্তু সিনিয়র সাংবাদিকদের নতুনদের সুযোগ না দেওয়া, যদিও সাংবাদিক পেশায় কেউ আসলে তাকে অবহেলা অবজ্ঞা করা, দু-একজন সুযোগ পেলেও তা আবার স্বজন প্রীতি ও পারিবারিক তান্ত্রিক হওয়া এবং মতামতেরে মিল না থাকায় সাংবাদিক ও অসাংবাদিক এবং স্বজন প্রীতির সমন্বয়ে সর্বপ্রথম গড়ে ওঠে শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব। সেখানেও ক্ষমতা ও নেতৃত্বে লোভ লালসায় সদস্যদের একটি অংশ গড়ে তুলে শেরপুর মডেল প্রেসক্লাব। একইভাবে উপজেলা প্রেসক্লাবের কথাকথিত সদস্যদের অবহেলা অবজ্ঞার কারনে গড়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ সাংবাদিক সংস্থা।
উত্তরবঙ্গ সাংবাদিক সংস্থার সাফল্য দেখে শেরপুরে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠতে থাকে সাংবাদিক সংগঠন। কিছু জাতীয় সাংবাদিক সংগঠন শেরপুরে কমিটি থাকলেও তা ছিল লোক চক্ষুর আড়ালে কিন্তু বর্তমান অতিরিক্ত সাংবাদিক সংগঠন গঠন হওয়ায়, তারাও সামনে চলে এসেছে।
বর্তমান শেরপুর উপজেলা ১২টি সাংবাদিক সংগঠনের বোঝা মাথায় নিয়ে ভার সহস্য করছে। সংগঠনগুলো হল
(১) শেরপুর প্রেসক্লাব (২) শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব (৩) উত্তরবঙ্গ সাংবাদিক সংস্থা (৪) শেরপুর মডেল প্রেসক্লাব (৫) অনলাইন প্রেস ক্লাব (৬) জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (৭) শেরপুর থানা প্রেসক্লাব (৮) বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব (৯) রিপোর্টার্স ফোরাম (১০) জাতীয় সাংবাদিক পরিষদ (১১) সাংবাদিক উন্নয়ন সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (১২) সম্মিলিত সাংবাদিক জোট।
এসব সাংবাদিক সংগঠনের দু একটি সংগঠন ছাড়া প্রায় সংগঠনে পত্রিকা বিহীন সদস্য ধারা ভরপুর।আবার কিছু সংগঠনে সদস্যবিহীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অথবা সহজলভ্য সোশাল মিডিয়া ফেসবুকে নিজেদের ছবি দিয়ে সাংবাদিক সংগঠনের নেতা জাহির করে বিভিন্ন মহলে অর্থনৈতিক সুবিধা সহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এসব সাংবাদিক সংগঠনের পত্রিকা বিহীন সদস্যরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আবার এসব সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা সংবাদ লিখতে পারুক আর না পারুক অন্যের তৈরিকরা নিউজ কপি করে এবং ফেসবুক ও গুগলে প্রকাশিত সংবাদ নকল করে এডিটিং এর মাধ্যমে ভয়েজ বসিয়ে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করে নিজেদের সাংবাদিক নেতা ও সাংবাদিক বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
শেরপুর উপজেলায় একটি পত্রিকার একটি সংগঠন। এতগুলো সংগঠন গড়ে ওঠার বিশেষ কারণ, ক্ষমতা ও অধিপত্য বিস্তার, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস আদালতে ধরনা দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি, বিভিন্ন অপরাধমূলক নিষিদ্ধ কাজের সহযোগিতা করে আর্থিক লাভবান হওয়া, থানা ও প্রশাসনিক দপ্তরে সাংবাদিক পরিচয় সহজে সখ্যতা গড়ে তোলে দালালি করা সহ বিভিন্ন কাজের সুবিধা পাওয়ায় গড়ে উঠছে সাংবাদিক সংগঠন গুলো।
আর এসব সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য তৈরি হচ্ছে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা থেকে । এসব পত্রিকার সম্পাদক এবং কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অযোগ্য অশিক্ষিত লোকদের সামান্য অর্থের বিনিময়ে উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম্য প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে । আর এসব প্রতিনিধিরাই হয়ে উঠছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও সদস্য। আবার এসব প্রতিনিধিরা নেতা ও সদস্য হয়ে, স্থানীয় পত্রিকার দেখানো পথ অনুসরণ করে, নামে বেনামের সরকারি ভাবে অনুমোদনবিহীন পত্র পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থের বিনিময়ে অপসংবাদিক তৈরি করছে।
এসব অপসংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্বের গুরুত্ব না বুঝে চাকচিক্য প্রেস আইডি কার্ড গলা ও কোমরে ঝুলিয়ে এবং লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেল ও গাড়িতে, প্রেস বা সাংবাদিক লেখা স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত এবং বিভিন্ন সমস্যায় সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবীর সাধারণ মানুষ ।
এদিকে আবার এসব অপসংবাদিকের কার্যকলাপ দেখে কিছু সুবিধাবাদীরা ফেসবুকে পেজ খুলে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রকৃত সাংবাদিক ও পত্রিকার মান নির্ণয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায়, প্রকৃত সাংবাদিকরা তাদের সম্মান এবং অভিজ্ঞতা বিসর্জন দিতে চলেছে।
শেরপুরে সাংবাদিক সংগঠন ছাড়াও ব্যাঙ্গের ছাতার মতোই তৈরি হচ্ছে কার্ডধারী সাংবাদিক। এসব সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করতে না জানলেও সাংবাদিক পরিচয়ে জনসাধারনদেরর ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ। এসব সাংবাদিকরা ঘটনার প্রকৃত সত্য তুলে না ধরে মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে বিভ্রান্ত ও সমস্যায় ফেলছে প্রশাসন সহ সাধারণ মানুষ গুলোকে