ঘুরে এলাম কক্সবাজার ও হিমছড়ি
- আপডেট সময় : ০৬:২৫:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
সেলিম রেজাঃ
সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, আকাশছোঁয়া পাহাড়, বৌদ্ধ মন্দির আর প্যাগোডা আরো নানান আকর্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এদেশের পর্যটন রাজধানী। ইংরেজ লেফটেন্যান্ট হিরাম কক্স এর নামানুসারেই এর নাম হয় কক্সবাজার। এ জেলার বিভিন্ন অংশ জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত আর ভ্রমণ স্থান।
বিশাল সমুদ্রে যেন মিশেছে দূর আকাশের সীমানা। উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের পেছনে ফণা তুলে আসে ঢেউ। সাথে দুধ সাদা ফেনার উৎসব। বিরামহীন ঢেউয়ের নৃত্যে ঝংকার তুলে হুহু সুরের মূর্ছনা । সৈকতে আছড়ে পড়া সে ঢেউ পর্যটকদের পায়ে পরায় ফেনার নূপুর । সমূদ্রের মনভোলানো নানান রোমাঞ্চ মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয় পর্যটকদের সব ক্লান্তি। শিস দিয়ে যেন আনাড়ি করে তুলে পর্যটকের মন। তাইতো দিন গড়াতেই তার বুকে জমে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। বলছি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন স্পট এটি।
কক্সবাজার বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল বহুদিনের। সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হলো প্রিয় কোম্পানি এনফোর্ডস বাংলাদেশ লিমিটেড এর সাপোর্টে বেরিয়ে পড়ি অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণে। রাজশাহীর বগুড়া জেলা থেকে সেদিন (১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং) বিকেলে বগুড়া থেকে আমাদের বাস ছাড়ে কক্সবাজার উদ্দেশ্যে অভিমুখে। সন্ধ্যা গড়িয়ে পৃথিবীর বুকে নামে নিকোশ কালো অন্ধকার। সন্ধ্যা গড়িয়ে অন্ধকার রাতে ছোট বড় গাড়ির হেট লাইটের আলোর ঝলকানি।
চোখেমুখে তখন কক্সবাজার ভ্রমণের তীব্র উত্তেজনা। সমান উত্তেজনা আমার বস মোঃ এজাজ আহম্মেদ, মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া, মোঃ সোহেল রনিসহ গাড়িতে থাকা আমাদের ট্যুরের সবার চোখে। তাইতো নানা গল্পে মেতেছি আমরা সবাই। কিছুদূর যেতেই যেন গহিন ঘুমে ডুব দিলেন অনেকেই। গাড়িতে কারো চোখে ঘুমের আবেশ কারোবা চোখে কক্সবাজার যাওয়ার উত্তেজনায় ঘুম নিরুদ্দেশ ।
সরি বলতে ভুলে গেছিলাম। রাতের খাওয়াদাওয়া পর্ব আমরা কুমিল্লার গ্রীন ভিউ হোটেলে করেছি। তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ৪ টা সবাই মিলে রাতের খাবার খাওয়া শেষে আবারও গাড়ি ছাড়ে।
অন্ধাকারের ফ্রেমে আবদ্ধ দৃষ্টি। তাইতো দেখা যায়না দূর সীমানা। যাই হোক চলতে চলতে রাতের খোলস ফুড়ে উঁকি দেয় ভোর। চোখ ছুঁয়ে যায় আলোর আলপিন।
ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে মাঝে মাঝে ব্রেক কষে বাস চালক। অবশ্য কর্ণফুলী সেতুর কাছে এসে মন যেন বলছে এইতো চলে আসছি কক্সবাজারে কিন্তু বাসতো থামেনি আমাদের । বাংলাদেশের অন্যতম এ দীর্ঘ সেতুকে ঘিরে জমে উঠেছে সকালের ব্যাস্ত নদী বন্দর । বন্দরে জাহাজ, মাছধরা ট্রলার আর সাম্পানের যেন মিলন মেলা, জেলেরা ঝাকে ঝাকে মাছ তুলছে পাড়ে । ইলিশের ঘ্রাণ যেন পাগল করে মন । এমন পরিস্তিতে কিছু সময় না দাড়িয়ে এবং মাছ আহরোনের এ দৃশ্য উপভোগ না করে গাড়িতো আর সামনে এগুতে দেয়া যায়না। যাই হোক সময় সল্পতার কারনে আমাদের বাস আর থামেনি। সড়কের ছন্দে চলে গাড়ি। কোথাও চোখের সামনে ধরা দেয় ছায়া ঘেরা গাছের সারী, নদী, হাওর, ঘনজঙ্গল, পাহাড় কখনোবা শহরের অট্রালিকা । জানালা দিয়ে কখনো দৃষ্টি চলে যায় দৃর সীমানায় ।
পাহাড়, নদী, ঘনজঙ্গল, শহরের কোলাহল আর খোলা প্রান্তরের প্রদর্শনী উপভোগ করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের গাড়ি থামে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে। কলাতলি বিচ স্ট্যান্ডে গাড়ি পার্কিং করে টানা ভ্রমণ থেকে মিলে নিস্তার।ও
একটানা ভ্রমনের ক্লান্তি ভর করেছে সবার উপর। তাই চোখ কচলাতে কচলাতে বিশ্রামের জন্য হোটেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই। মোটামোটি সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আমাদের কয়কেজনের চোখে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। কেননা স্ট্যান্ড থেকে সমুদ্রের যে গর্জন শোনা গিয়েছিল সে গর্জন কানে ভাসছে বারবার। তাই কিছু সময় বিস্রাম নিয়ে ছুটে চলি সমুদ্র পানে। নগ্ন পায়ে সৈকতের নরম বালুচরে দাঁড়াতেই সমস্ত ক্লান্তি যেন মুহূর্তে ধুয়ে নিয়ে যায় সমূদ্রের উচ্ছ্বাস। রাতের সমূদ্র একেবারে অন্যরকম। ব্যস্ত নগরীর ক্লান্ত নাগরীকের নাক ডাকা সুরে যেন ঘুমিয়ে যায় পুরো পৃথিবী। কিন্তু সদা জাগ্রত সমূদ্রের উত্থাল ঢেউয়ে যেন উতলা করে তুলে আমাদের মন । এ দৃশ্য অসাধারন । রাতকে বিদায় দিতে সমূদ্র বুকে জোয়ার এসে যেন চলে ভোরের আমন্ত্রণ। আকাশে আলো ফোঁটলে চোখে ধরা দেয় বালুচরে লাল কাঁকড়ার লুকুচুরি খেলা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া নানা রঙ্গের শামুক-ঝিনুক।
সকালে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামে চলে যাই। চোখে ঘুমের হাল্কা পরশ এলেও যেন জেগে থাকে মন। সকাল আটটা বাজতেই গোসলের প্রস্তুতি সেরে ছুটে চলি সমুদ্র-রোমঞ্চে । ঢেউয়ে পিঠ ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে পড়া, ঢেউয়ে ভেসে কিংবা লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দেওয়ার সে এক অসাধারণ মুহূর্ত। যেন ফিরে যাই শৈশবে। ঢেউয়ের সাথে চলে অবিরাম ছেলেখেলা। চলে ওয়াটার বাইক, মোটর বাইক, সার্ফিংয়ের এডভেঞ্চার । ছাতার নিচে বসে এ দৃশ্য উপভোগের স্বাদ একেবারে ভিন্ন। বিচে ছাতায় বসে, পাড়ে দাড়িয়ে কিংবা সমুদ্র ঢেউয়ে ভিজে জুবুথুবু হয়ে চলে ক্লিক ক্লিক ছবি তোলার ধুম। ভ্রমণের এ সেরা সময়টুকু হয় ক্যামেরাবন্দি। কলাতলি, সুগন্ধা, লাবনী বিচ সহ আরো কয়টি বিচ, ঢেউ আর গর্জন মিলে সমুদ্র সাজিয়ে বসেছে রোমাঞ্চিত সৌন্দর্যের পসরা। এ যেন মনোমুগ্ধকর এক ভিন্ন জগত।
শেষ বিকেলে আসে জোয়ার, পৃথিবীর বুকটাকে লালা রঙ্গে সাজিয়ে লাল থালার মতো সূূর্য ঢুবে পশ্চিম সমুদ্রে । দিনের ক্লান্তিতে বিদায় হয় ঢেউয়ের সাথে পাঞ্জা লড়ার রোমাঞ্চ। সূর্যাস্তে এযেন সমূদ্রের সাথে গভির প্রেম।
হিমছড়ি:
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এক সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি। এখানকার সৈকতের চেয়েও আকর্ষণীয় হলো এর ভ্রমণ পথ। সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোঁয়া পাহাড় এখানের অন্যতম আকর্ষণ। হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণাও বেশ আকর্ষণীয়। কক্সবাজার সৈকত থেকে সবসময়ই খোলা জীপ ছাড়ে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৫০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে লাগবে ১০০০-১২০০ টাকা। এছাড়া রিকশা করেও যাওয়া যায় হিমছড়িতে। যাওয়া আসার ভাড়া লাগবে ১৫০-২০০ টাকা। আর ব্যাটারি চালিত রিকশায় গেলে যাওয়া আসার ভাড়া পড়বে ৮০-১০০ টাকা।