ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গুম খুনের প্রতিটি মামলায় হুকুমের আসামী থাকবে হাসিনা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জলঢাকায় জমি দখল ও থানায় মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন গাজীপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেদখলের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন বিক্ষোভ ভেপুরাইজার মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান সৈয়দপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এ বছর ৫৩ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বগুড়ায় ফ্রেন্ডস্ ব্লাড ডোনেট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অসহায় বৃদ্ধা মাকে হুইল চেয়ার প্রদান জবাবদিহি পত্রিকার ৮ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে খোকসায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত পূর্বের সিস্টেম যদি বলবৎ থাকে তাহলে কি আমরা এই বাংলাদেশ জন্য জীবন দিয়েছি ; গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর কেউ একজন আসুক খানপুর ইউনিয়ন সোনালী সংসদের উদ্যোগে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান

আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস ও বাংলাদেশে আরবি চর্চার প্রয়োজনীয়তা

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক যখন সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের এ দিনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরবিকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ১৯০তম অধিবেশনে১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে শুরু হয় আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবসের পথ চলা।

আরব বিশ্বে দিবসটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হলেও শুধুমাত্র মূলধারার মিডিয়ার নির্লিপ্ততার কারণে বাংলাদেশে দিবসটি তেমন কোনো সাড়া জাগাতে পারেনি। অথচ আরবি ভাষার সঙ্গে রয়েছে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আত্মার সম্পর্ক।
এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ আরবি ভাষাকে পরম শ্রদ্ধা করে, মন থেকে ভক্তি করে ও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। আরবি ভাষার যেমন রয়েছে ধর্মীয় গুরুত্ব, তেমনই রয়েছে বৈষয়িক গুরুত্ব। পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা আরবি। আর ২৫ কোটি মানুষ আরবিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। ২৫টি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দাপ্তরিক ভাষা আরবি। জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষার একটি আরবি। তাই যুগ ও বাস্তবতার নিরিখে আরবি ভাষা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী একটি ভাষা। অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও আরবি ভাষা বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি ধরা হয় রেমিটেন্স। আর এ রেমিটেন্সের সিংহভাগই অর্জিত আরবি ভাষার দেশসমূহ থেকে। তাই দেশের রেমিটেন্স বাড়ানোর স্বার্থে, দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার স্বার্থে, দেশের আয় ও উন্নতির স্বার্থে আরবি ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অধিক মানুষ জীবিকার তাগিদে আরব দেশগুলোতে যায়। অথচ আরবি ভাষার সঙ্গে তাদের পূর্ব কোনো সম্পর্ক থাকে না। আরবি ভাষার সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক থাকলে এ লোকগুলো আরব দেশে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারত। নিজেদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা আরও বেশি আদায় করে নিতে পারত।

বর্তমান সরকার একটু উদ্যোগী হয়ে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে আরব দেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিক্ষাকোর্স চালু করতে পারে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে রেমিটেন্সের ওপর। ইসলামের সঙ্গে এ জনপদের সম্পর্ক হাজার বছরেরও বেশি। সুদীর্ঘ এই সময়ের প্রতিদিন এ ভূখন্ডের মানুষ নিদ্রা ত্যাগ করে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করে যে আজানের সুমধুর সুর শোনে তা-ও কিন্তু আরবি ভাষার কিছু বাক্য। দলমত নির্বিশেষে এ দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন সামান্য হলেও কোরআন পড়ে থাকে। তাঁরও ভাষা আরবি।
এ দেশের লক্ষাধিক মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবেলা দলবদ্ধভাবে ও এককভাবে যে নামাজ পড়া হয় তাঁর ভাষাও আরবি। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তিনি যে দল ও মতের হোক না কেন, নামাজের কারণে প্রতিদিন তাকে কম করে হলেও মোট আধা ঘণ্টা সময় নিবীড়ভাবে আরবি ভাষার সঙ্গে কাটাতে হয়। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে তাকে দশ মিনিট আরবিতে খুতবা শোনতে হয়। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তাদের জন্মের পর মুহূর্তে সর্বপ্রথম যে শব্দ শোনে, যে বাক্যগুলো দিয়ে পৃথিবীর নতুন জীবনে তারা বরণীয় হয়, সমাদৃত হয়, অভিনন্দিত হয়- সেই আজানের ভাষাও আরবি। আবার পৃথিবী থেকে তাকে চিরবিদায় দেওয়া হয় আরবি ভাষায়। জানাজার নামাজ, লাশ কবরে রাখার দোয়া, কবর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দোয়া সবই আরবিতে। তাই আরবি ভাষার সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক। শুধু জন্ম-মৃত্যু নয় বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিত্যদিনের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক সুকঠিন এক সম্পর্ক।
তুলনামূলকভাবে বিদেশি ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি ভাষা অনেক সহজ।

লেখক,
জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো মিশর

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস ও বাংলাদেশে আরবি চর্চার প্রয়োজনীয়তা

আপডেট সময় : ০৩:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের এ দিনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরবিকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ১৯০তম অধিবেশনে১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে শুরু হয় আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবসের পথ চলা।

আরব বিশ্বে দিবসটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হলেও শুধুমাত্র মূলধারার মিডিয়ার নির্লিপ্ততার কারণে বাংলাদেশে দিবসটি তেমন কোনো সাড়া জাগাতে পারেনি। অথচ আরবি ভাষার সঙ্গে রয়েছে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আত্মার সম্পর্ক।
এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ আরবি ভাষাকে পরম শ্রদ্ধা করে, মন থেকে ভক্তি করে ও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। আরবি ভাষার যেমন রয়েছে ধর্মীয় গুরুত্ব, তেমনই রয়েছে বৈষয়িক গুরুত্ব। পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা আরবি। আর ২৫ কোটি মানুষ আরবিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। ২৫টি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দাপ্তরিক ভাষা আরবি। জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষার একটি আরবি। তাই যুগ ও বাস্তবতার নিরিখে আরবি ভাষা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী একটি ভাষা। অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও আরবি ভাষা বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি ধরা হয় রেমিটেন্স। আর এ রেমিটেন্সের সিংহভাগই অর্জিত আরবি ভাষার দেশসমূহ থেকে। তাই দেশের রেমিটেন্স বাড়ানোর স্বার্থে, দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার স্বার্থে, দেশের আয় ও উন্নতির স্বার্থে আরবি ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অধিক মানুষ জীবিকার তাগিদে আরব দেশগুলোতে যায়। অথচ আরবি ভাষার সঙ্গে তাদের পূর্ব কোনো সম্পর্ক থাকে না। আরবি ভাষার সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক থাকলে এ লোকগুলো আরব দেশে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারত। নিজেদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা আরও বেশি আদায় করে নিতে পারত।

বর্তমান সরকার একটু উদ্যোগী হয়ে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে আরব দেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিক্ষাকোর্স চালু করতে পারে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে রেমিটেন্সের ওপর। ইসলামের সঙ্গে এ জনপদের সম্পর্ক হাজার বছরেরও বেশি। সুদীর্ঘ এই সময়ের প্রতিদিন এ ভূখন্ডের মানুষ নিদ্রা ত্যাগ করে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করে যে আজানের সুমধুর সুর শোনে তা-ও কিন্তু আরবি ভাষার কিছু বাক্য। দলমত নির্বিশেষে এ দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন সামান্য হলেও কোরআন পড়ে থাকে। তাঁরও ভাষা আরবি।
এ দেশের লক্ষাধিক মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবেলা দলবদ্ধভাবে ও এককভাবে যে নামাজ পড়া হয় তাঁর ভাষাও আরবি। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তিনি যে দল ও মতের হোক না কেন, নামাজের কারণে প্রতিদিন তাকে কম করে হলেও মোট আধা ঘণ্টা সময় নিবীড়ভাবে আরবি ভাষার সঙ্গে কাটাতে হয়। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে তাকে দশ মিনিট আরবিতে খুতবা শোনতে হয়। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তাদের জন্মের পর মুহূর্তে সর্বপ্রথম যে শব্দ শোনে, যে বাক্যগুলো দিয়ে পৃথিবীর নতুন জীবনে তারা বরণীয় হয়, সমাদৃত হয়, অভিনন্দিত হয়- সেই আজানের ভাষাও আরবি। আবার পৃথিবী থেকে তাকে চিরবিদায় দেওয়া হয় আরবি ভাষায়। জানাজার নামাজ, লাশ কবরে রাখার দোয়া, কবর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দোয়া সবই আরবিতে। তাই আরবি ভাষার সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক। শুধু জন্ম-মৃত্যু নয় বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিত্যদিনের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক সুকঠিন এক সম্পর্ক।
তুলনামূলকভাবে বিদেশি ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি ভাষা অনেক সহজ।

লেখক,
জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো মিশর